তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে কোনো সময়সীমা বেধে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। গতকাল (সোমবার) তিনি ওই মন্তব্য করেন। গত এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে পাশে নিয়ে নয়াদিল্লিতে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে তিস্তা চুক্তি কবে হবে তা নিশ্চিত নয়।
সোমবার সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘মমতাকে পাশে নিয়েই তিস্তা পানি চুক্তি হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার বিকল্প হিসেবে যে ৪ টি নদীর পানি বিভাজন নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন আমরা সেই প্রস্তাবও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখেছি। এ সংক্রান্ত জরিপ রিপোর্ট যথাসময়ে আমরা মমতাকে জানাব এবং আলোচনাও হবে।’
ছিটমহল বিনিময় ও বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ভূমি সংক্রান্ত চুক্তির সাফল্যের কথা তুলে ধরে সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে দেয়া ভালো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেই রাজ্যের স্বার্থ সমন্বিত যে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তিতেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই ছিটমহল বিনিময় ও বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ভূমি সংক্রান্ত চুক্তি সম্ভব হয়েছে। তিস্তার পানি চুক্তি নিয়েও ঠিক একইভাবে মমতার পূর্ণ সমর্থন ও সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় মমতা তাকে বলেছিলেন, ‘আপনার তো পানি দরকার। তোর্সা ও আরও যে দু’টি নদী উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গেছে, তার পানির ভাগ ঠিক করতে দু’দেশ কমিটি গড়ুক। শুকনো তিস্তার জল দেয়াটা সত্যিই সমস্যার।’
সুষমা স্বরাজ মমতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার কী তাহলে মমতার তোর্সা পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে? সেই প্রশ্নই এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবে রাজি হবে কী না তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে।
শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে মমতা সেসময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তিস্তার পানি দেয়াটা যে সত্যিই সমস্যার, সে কথা আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেছি। শুকনো মওসুমে তিস্তায় পানি কোথায়? তখন বাংলাদেশকে পানি দিয়ে দিলে পশ্চিমবঙ্গে চাষের জন্য পানির টান পড়বে। খাবার পানিও পাওয়া যাবে না। তার চেয়ে বরং অন্য কথা ভাবুন।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কয়েক দফা অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ, বাংলাদেশ আম আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ বাড়ানোয় মালদার আম চাষিরা সঙ্কটে পড়েছেন। একইভাবে এপার বাংলার আম ব্যবসায়ীরা আম রফতানিতে মার খাচ্ছেন।
তাছাড়া বাংলাদেশের মাথাভাঙ্গা নদীতে ভয়াবহ দূষণের ফলে পশ্চিমবঙ্গের অংশে ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে। এমনকী নদী মজেও যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে অতিরিক্ত মাত্রায় বাঁধ আর নদী সংকোচন ব্যবস্থা নেয়ার জেরে ট্যাংগন, পূনর্ভবা আর আত্রেয়ী নদীর স্রোত কমে যাচ্ছে। এরফলে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের ওইসব নদীর বেঁচে থাকাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে মমতার দাবি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যেসব সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করেছেন আমরা প্রত্যেকটি বিষয়ই খতিয়ে দেখছি।#
সুত্র - parstoday.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন